গত ফেব্রæয়ারিতে কমলাপুরে অনুষ্ঠিত ফাইনালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে যৌথ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ ও ভারত। তার আগে মঞ্চায়ন হয়েছিল এক প্রস্থ নাটক। এবার সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে টস নাটকীয়তা হয়নি। তবে প্রথমার্ধের শুরুতেই পিছিয়ে পড়েছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধেই ঘুরে দাঁড়ায় সাইফুল বারী টিটুর শিষ্যরা। তাতে অবশ্য ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হয়নি। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ভারতকে হারিয়েই শিরোপা পুনরুদ্ধার করল বাংলাদেশ। গতকাল রোববার নেপালের কাঠমান্ডুর আনফা কমপ্লেক্সে ফাইনালে টাইব্রেকারে ভারতকে ৩-২ গোলে হারায় বাংলার বাঘিনীরা।
নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলের সমতায় শেষ হয় ম্যাচটি। এর আগে ২০১৭ সালে এই শিরোপা জিতেছিল মেয়েরা। এদিন টাইব্রেকারের শুরুতে বাংলাদেশের আক্রমণভাগের সেরা তারকা সুরভী আকন্দ প্রীতির দুর্বল শট আটকে দেন গোলরক্ষক। ভারত এগিয়ে যায় সবিতা রানীর গোলে। নির্ধারিত সময়ের খেলায় বাংলাদেশকে সমতার স্বস্তি এনে দেয়া মরিয়ম বিনতে হান্না টাইব্রেকারেও পান জালের দেখা। এরপর ভারতের আলেনা দেবির শট ঝাঁপিয়ে পড়া ইয়ারজানের গøাভস ছুঁয়ে পোস্টে লেগে ফিরে। তাতে এই থাপেও সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। তৃতীয় শটে সতীর্থ থুইনুই মারমার লক্ষ্যভেদের পর বোনিফিলিয়া শুল্লাইয়ের শট ইয়ারজান আটকালে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। নাটকীয়তার তখনও ঢের বাকি। আলপি আক্তারের শটে গোলরক্ষক নড়াচড়ার সুযোগই পাননি, কিন্তু কপাল মন্দ। বল পোস্ট কাঁপিয়ে ফিরে! এরপর অনিতার লক্ষ্যভেদে সমতায় ফিরে ভারত। পঞ্চম শটে লক্ষ্যভেদ করেন সাথী মুন্ডা। তাতে জয়ের আশা জাগে বাংলাদেশের। আর সবশেষে দিবানি লিন্ডার পঞ্চম শট ফিরিয়ে স্বপ্ন সত্যি করেন ইয়ারজান। বিশ্বস্ত হাতে বল ফিরিয়েই মাঠে শুয়ে পড়েন ইয়ারজান; তাকে ঘিরেই উৎসব শুরু করে এতক্ষণ নখ কামড়ানো উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষায় থাকা বাকিরা।
রাউন্ড রবিন লিগে সেরা হওয়ার পথে ভারতকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ফাইনালেও তাদের হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলো মেয়েরা। ম্যাচের শুরুটা যদিও ছিল ভীষণ হতাশার; চতুর্থ মিনিটেই যে এগিয়ে যায় ভারত। নিজেদের অর্ধ থেকে বোনিফিলিয়ার লম্বা ক্রস অফসাইড ফাঁদ ভেঙে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সে ঢুকে বাম পায়ের শটে দূরের পোস্ট দিয়ে জাল খুঁজে নেন আনুশকা কুমারি। গোলরক্ষক ইয়ারজান ঝাঁপিয়েও পাননি বলের নাগাল। ওই ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতের জমাট রক্ষণে কাঁপুনি তুলতে পারছিল না মেয়েরা। ফাইনালের আগে পাঁচ গোল করা সুরভী আকন্দ প্রীতিও পারছিলেন না কড়া পাহারা ভেদ করতে। প্রথমার্ধের শেষ দিকে সেট পিস থেকে সুযোগ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু কর্নার থেকে উড়ে আসা বল গোলরক্ষক দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় গোললাইন থেকে ফেরালে এগিয়ে থাকার আনন্দে বিরতিতে যায় ভারত। বিরতির পর গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে মেয়েরা। ৭০তম মিনিটে অবশেষে হাসি ফোটে বাংলাদেশ শিবিরে। অনন্যা বিথীর কর্নারে ছোট বক্সের ভেতর থেকে পা ছুঁইয়ে সমতা ফেরান মরিয়ম বিনতে হান্না। এরপর, টাইব্রেকারের ওই রোমাঞ্চকর অধ্যায়, যেখানে ইয়ারজানের অসাধারণ নৈপুণ্যে শুরু লাল-সবুজের শিরোপা উৎসব।